Pages

Showing posts with label HEIB. Show all posts
Showing posts with label HEIB. Show all posts

Monday, August 1, 2016

তমদ্দুন মজলিস কি?

তমদ্দুন মজলিস ১৯৪৭ সালে আবুল কাসেম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের , (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তুলে তমদ্দুন মজলিস বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু করে।


তমদ্দুন মজলিশ ইসলামী আদর্শাশ্রয়ী একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশে ইসলামী আদর্শ ও ভাবধারা সমুন্নত করার প্রত্যয় নিয়ে ভারত বিভাগের অব্যবহিত পরেই ঢাকায় গড়ে উঠে এই সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর নামকরণ হয় পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ। তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক আবুল কাশেমের অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক এ.এস.এম নূরুল হক ভূঁইয়া, শাহেদ আলী, আবদুল গফুর, বদরুদ্দীন উমর, হাসান ইকবাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় সিনিয়র ছাত্র। প্রফেসর আবুল কাশেম ছিলেন পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৯ সালে মজলিশের সভাপতি নির্বাচিত হন।
নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ইসলামী চেতনার উন্মেষ ঘটানো এবং ইসলামী ভাবধারা ও সংস্কৃতির প্রসারই ছিল এই সাংস্কৃতিক ফোরামের মূল লক্ষ্য। এই ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা লক্ষ্যনীয়ভাবেই প্রভাবিত হয়েছিলেন বিশ শতকের চল্লিশের দশকের ক্যালকাটা রেনেসাঁ সোসাইটির মতাদর্শে। সম্ভবত তারা বিভাগপূর্ব বেঙ্গল মুসলিম লীগের বামপন্থী দর্শন বিশেষত আবুল হাশেমের বামপন্থী দর্শনে প্রভাবিত হন। তাদের মধ্যে ইসলামী বিপ্লব বা ইসলামী সমাজতন্ত্রের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবং আরও কতক ব্যাপারে তাদের প্রত্যয় ও অবস্থান ছিল গণমুখী। তমদ্দুন মজলিশের গঠনতন্ত্রে বিধৃত এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ:
১. কুসংস্কার, গতানুগতিকতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা দূর করে ‘সুস্থ ও সুন্দর’ তমদ্দুন গড়ে তোলা;
২. যুক্তিবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত সর্বাঙ্গ সুন্দর ধর্মভিত্তিক সাম্যবাদের দিকে মানবসমাজকে এগিয়ে নেওয়া;
৩. মানবীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা;
৪. নিখুঁত চরিত্র গঠন করে গণজীবনের উন্নয়নে সহায়তা করা।
প্রতিষ্ঠার পর এর প্রথম পর্বে তমদ্দুন মজলিশের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। মজলিশের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় সারা বছর আলোচনা সভা, সেমিনার, বিতর্ক, নাট্যাভিনয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতো। এর নিয়মিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক-পুস্তিকা ও প্রচারপত্র প্রকাশ। তমদ্দুন মজলিশের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর (২৮ কার্তিক ১৩৫৫)। শুরুতে সৈনিক পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন শাহেদ আলী এবং পরে সভাপতি হন আবদুল গফুর। ঢাকার আজিমপুর রোডের ১৯ নং বাড়ি থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তমদ্দুন মজলিশ সমগ্র পূর্ব বাংলায় এর কর্মপরিধি বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়। জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে এবং কোথাও কোথাও থানা পর্যায়ে সংগঠনের শাখা স্থাপিত হয়। প্রথমদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ক্যাম্পাসের নিকটস্থ রশিদ বিল্ডিং -এ তমদ্দুন মজলিশের কেন্দ্রীয় দফতর স্থাপিত ছিল। ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে তমদ্দুন মজলিশের ভূমিকা ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে বস্ত্তত তমদ্দুন মজলিশই প্রথম প্রতিবাদ উত্থাপন করে এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিসহ ভাষা আন্দোলনের সূচনায় পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তমদ্দুন মজলিশ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শিরোনামে অধ্যাপক আবুল কাশেম সম্পাদিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এ ঐতিহাসিক পুস্তিকায় সন্নিবেশিত নিবন্ধগুলোতে এদের লেখক কাজী মোতাহার হোসেন , আবুল মনসুর আহমদ ও অধ্যাপক আবুল কাশেম বাংলাকে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম, অফিস ও আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তাঁরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিও তুলে ধরেন। এই মূল পুস্তিকার মুখবন্ধে, পুস্তিকার সম্পাদক আবুল কাশেম কর্তৃক প্রণীত একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনাও ছিল বাংলা ভাষার অনুকূলে। বাংলাকে স্বীকৃতি দানের দাবির এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ ছিল নিম্নরূপঃ
১. বাংলা ভাষাই হবে (ক) পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন (খ) পূর্ব পাকিস্তানের আদালতের ভাষা এবং (গ) পূর্ব পাকিস্তানের অফিসের ভাষা; ২. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হবে দুটি- বাংলা ও উর্দু; ৩. (ক) বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের প্রথম ভাষা। পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা একশ’ জনই এ ভাষা শিক্ষা করবেন। (খ) পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু হবে দ্বিতীয় ভাষা বা আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা। যারা পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে চাকরি ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত হবেন শুধু তারাই এ ভাষা শিক্ষা করবেন। এই ভাষা পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৫ হতে ১০ জন শিক্ষা করলেও চলবে। মাধ্যমিক স্কুলের উচ্চতর শ্রেণিতে এই ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিক্ষা দেয়া হবে। (গ) ইংরেজি হবে পাকিস্তানের তৃতীয় ভাষা বা আন্তর্জাতিক ভাষা। পাকিস্তানের কর্মচারী হিসেবে যারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চাকরি করবেন বা যারা উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষায় নিয়োজিত হবেন তারাই শুধু ইংরেজি শিক্ষা করবেন। তাদের সংখ্যা পূর্ব পাকিস্তানে হাজার, করা একজনের চেয়ে কখনও বেশি হবে না। ঠিক এই নীতি হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে (স্থানীয় ভাষার দাবি না উঠলে) উর্দু প্রথম ভাষা, বাংলা দ্বিতীয় ভাষা আর ইংরেজি তৃতীয় ভাষার স্থান অধিকার করবে। ৪. শাসন কাজ ও বিজ্ঞান শিক্ষার সুবিধার জন্য আপাতত কয়েক বছরের জন্য ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই পূর্ব পাকিস্তানের শাসন কাজ চলবে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনানুযায়ী বাংলা ভাষায় সংস্কার করতে হবে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলাভাষা বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান কর্তৃক বাংলাভাষা ও বাংলালিপি সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন অশালীন উক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তমদ্দুন মজলিশের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন মজলিশ নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএসএম নূরুল হক ভূইয়া এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন তমদ্দুন মজলিশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাশেম। ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে আবুল কাশেম ছিলেন আন্দোলনের মধ্যমনি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির সপক্ষে যুবসমাজ এবং বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্রদের সমর্থন লাভে তাঁর সাফল্য ছিল অভাবনীয়। এভাবেই প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে রূপলাভ করে একটি সাংগঠনিক কাঠামো, আর এরই মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকের মাসগুলোতে সংগঠিত হয় ভাষা আন্দোলন। করাচিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল এডুকেশন কনফারেন্সে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে প্রথম প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে তমদ্দুন মজলিশ কর্মী এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের যৌথসভায় মজলিশ কর্মী শামসুল আলমকে আহবায়ক করে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ’ নামে একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়।
বাংলা ভাষার আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিশের অবস্থান ছিল পূর্ববাংলায় জনসাধারণের আকাঙ্খারই প্রতিফলন। তমদ্দুন মজলিশ ব্যাপক সাড়া পেয়েছে দেশের ইসলাম ভাবাপন্ন বিশিষ্ট মহল থেকে, বিশেষত ছাত্র ও শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক ও সংস্কৃতিসেবীদের কাছ থেকে। তদুপরি ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিশের পথিকৃতের ভূমিকা এ সংগঠনের জন্য এনে দিয়েছে উদার ও মুক্তবুদ্ধির বিশিষ্ট জনগোষ্ঠীর মৌন সমর্থন, যদিও তারা ঐ আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না যে আদর্শের উপর ভিত্তি করে তমদ্দুন মজলিশ গড়ে উঠেছিল। এখানেই তমদ্দুন মজলিশের বিরাট সাফল্য যে, এই সংগঠন অত্যন্ত সফলভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সামাজিক প্রত্যয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে ভাষা আন্দোলনকে একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করেছে।
ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই তমদ্দুন মজলিশের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতা কর্মীরা সরকারের চরম নিগ্রহের শিকার হন। তাদের গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করা হয়। পুলিশ হামলা চালিয়ে মজলিশের কেন্দ্রীয় দফতর এবং সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার অফিস তছনছ করে। সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক কাজী গোলাম মাহবুব গ্রেফতার হন। মজলিশের প্রথম কাতারের নেতা দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, প্রফেসর আবুল কাশেম, আবদুল গফুর প্রমুখ নিরাপত্তার জন্য মফঃস্বল এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নেন।
তমদ্দুন মজলিশ এখনো ঢাকায় এর সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। ১৯৯১ সালে প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর আবদুল গফুর মজলিশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় আজীবন সভাপতি দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৯৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]


Monday, May 30, 2016

মুজিবনগর সরকার



মুজিবনগর সরকার  মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর সরকারের কর্মকান্ড বাংলাদেশ ভূখন্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার প্রবাসী মুজিবনগর সরকার হিসেবেও খ্যাত।
সরকার গঠন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা প্রধান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুক্তাঞ্চল বৈদ্যনাথতলায় সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন  ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয় ১৮ এপ্রিল। এদিন সরকারের কাঠামো ছিল নিম্নরূপ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
রাষ্ট্রপতি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
উপরাষ্ট্রপতি (রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব কর্তব্য পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত)
তাজউদ্দীন আহমদ
প্রধানমন্ত্রীএবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী
খন্দকার মোশতাক আহমদ
মন্ত্রী, পররাষ্ট্র, আইন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
এম মনসুর আলী
মন্ত্রী, অর্থ, শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
এইচ এম কামরুজ্জামান
মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়
মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে।

 আমাদের জন্য এই সরকার গঠন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যুদ্ধের উপরে এর প্রভাব ছিল সুদুর প্রসারী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই এটা ছিল বৈধ সরকার ফলে বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন ধরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আইনানুগ ক্ষমতাও ছিল তাদের মুজিবনগর সরকার গঠিত না হলে জনগণ যতই প্রশংসা করুক না কেন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা বিদ্রোহী হয়ে পড়তাম

Monday, May 23, 2016

বাংলা নামের উৎপত্তি কি ভাবে হয়েছিল?

ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অনুযায়ী সৃষ্টির আদিতে মানবকূল ছিল একই গোষ্ঠীভূক্ত (আল-কুরআন-২ঃ২১৩)। সময়ের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বেড়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৌরাত ও আল-কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত নূহ (আঃ) মহাপ্লাবনের পূর্বে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের নিয়ে বজরায় আরোহণ করেন। এর বাইরে থাকা পৃথিবীর সকল স্থলজ প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। প্লাবনের পর হযরত নূহ (আঃ)-এর নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। যে সব অঞ্চলে তাঁরা বসতি স্থাপন করেন, তাদের নামানুসারেই সেসব অঞ্চলের নামকরণ করা হয়।   এভাবেই পৃথিবীতে দ্বিতীয় দফায় মানব জাতির বিস্তার ঘটে এবং অনুমান করা হয় যে, আধুনিক বিশ্বের মানব গোষ্টী তাদেরই বংশধর। সে অনুসারে হযরত নূহ (আঃ)-কে দ্বিতীয় আদম বলা হয়। হযরত নূহ (আঃ)-এর এক পুত্রের নাম ছিল হাম এবং হামের পুত্রের নাম হিন্দ। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম বং। ঐতিহাসিকরা দবী করেন- ‘বং’ এবং তাঁর সন্তানেরা এই অঞ্চলে (বর্তমান দুই বাংলা) বসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চল ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

মুগল ঐতিহাসিক আবুল ফজল বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন এভাবে যে,
বাঙ্গালাহর প্রাচীন নাম ছিল বঙ। এর পূর্বেকার শাসকগণ সমগ্র প্রদেশে পাশে ২০ গজ এবং উচ্চতায় ১০ গজ উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেন। এগুলিকে ‘আল’ বলা হতো। বঙ-এর সাথে আল যুক্ত হয়ে দেশটির বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি হয় এবং তা ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। কেউ হয়ত আবুল ফজলের ব্যাখ্যার সাথে একমত নাও হতে পারেন, তবে এটা পরিষ্কার যে, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাঙ্গালাহ ‘বঙ’ অর্থাৎ প্রাক-মুসলিম যুগের ‘বঙ্গ’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।

শাব্দিক বিশ্লেষণ হচ্ছে বঙ্গ + আল = বঙ্গাল / বংগাল ,পরে শব্দটি বংগাল থেকে বাংলা রূপ ধারণ করে ।

এভাবেই প্রথমে বং/বঙ থেকে বঙ্গাল / বংগাল থেকে বাংলা নামের উৎপত্তি হয়।

Wednesday, March 9, 2016

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল। ১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলেপাকিস্তানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান গং মামলা। তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিত, কারণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তির চার যুগ পর মামলার আসামী ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী ২০১১ সালে প্রকাশিত একটি স্বরচিত গ্রন্থে এ মামলাকে সত্য মামলা' বলে দাবী করেন।
তথ্যসূত্র
Wikipedia.org


আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করে তা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষদের মধ্যে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ থাকায় একে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ মামলা এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার অচিরেই মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

তথ্যসূত্র
banglapedia.org

Tuesday, March 8, 2016

শরিফ শিক্ষাকমিশন কি?

শরিফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বহু বিষয়ের মধ্যে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো এবং যেসকল বিষয়ের কারণে এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সংঘটিত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো–

০১. শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে ইংরেজিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। বলা হয় যে, জাতীয় জীবনে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব রয়েছে। এতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত কারিকুলামে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক চালু করার সুপারিশ করা হয়।

০২. পাকিস্তানে যে সকল ভাষা রয়েছে সেসকল ভাষার জন্য অভিন্ন বর্ণমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। অর্থাৎ, বাংলা ভাষা বাংলা বর্ণমালায় না
লিখে আরবি অথবা রোমান বা উর্দু বর্ণমালায় লেখার সুপারিশ করা হয়। একইসাথে বাংলা বর্ণামালার সংস্কারের সুপারিশও করা হয়।

০৩. তৎকালীন সময়ে ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষাকোর্স দুই বছরে সমাপ্ত হতো। কমিশনের রিপোর্টে এই কোর্সের মেয়াদ তিন বছর করার সুপারিশ করা হয়।

০৪. এই কমিশনের রিপোর্টে যে বিষয়বস্তু সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তা হলো, এই রিপোর্টে শিক্ষাকে 'অধিকার’ হিসেবে না দেখে শিক্ষাকে ‘বাণিজ্য’ হিসেবে দেখা হয়েছিল, অর্থাৎ শিক্ষাকে ব্যবসার কাতারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। রিপোর্টে ‘অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে অসম্ভব বলা হয়। এতে বলা হয়, “শিক্ষার জন্য জনসাধারণের নিকট হতে খুব সামান্যই অর্থসাহায্য পাওয়া গিয়াছে এবং আরো স্কুলের জন্য জনসাধারণ যতটা দাবি জানাইয়া থাকে ইহার অনুপাতে ব্যয় বহনের অভিপ্রায় তাহাদের কখনই দেখা যায় নাই।”

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, ১৮৩০ থেকে ১৯৭১; ড. মোহাম্মদ হাননান; আগামী প্রকাশন
https//:mongoldhoni.net/on-17-september-education-day/

Thursday, March 3, 2016

ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ?

ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারে প্রাধান্য পায়। পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার চল ছিলো খুবই কম। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ
(যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন) এই সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম- মর্যাদার দাবীতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে। এই ঘোষণারফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনি ঘোষণা করে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অনেক ছাত্র ও আরো কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে একটি মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-এর কাছে এলে পুলিস মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন আব্দুস সালাম,রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ও তীব্র আকার ধারন করে। অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলা ও উর্দুভাষাকে সম-মর্যাদা দিতে। এই আন্দোলন পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করে দিয়েছিল। এই আন্দোলনের স্মৃতিতে পরবর্তী কালে গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনার, ঠিক সেই জায়গাতে যেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন রফিক, বরকত, জব্বাররা। ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটি বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে।

Sunday, February 28, 2016

লাহোর প্রস্তাব কি?

১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম দেশের দাবী জানিয়ে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুমোদন করে। বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে এটি পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে অভিহিত হয়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

লাহোর প্রস্তাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়াতে এবং
ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মতামত না নিয়ে ভারত সরকারের যুদ্ধে যোগদানের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা আলোচনা করতে এবং ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশসমূহে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণের জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালে লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাধারণ অধিবেশন আহবান করেন। মুসলিম লীগের কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরার্দী ১৯৪০ সালের ১৯ মার্চ লাহোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। অধিবেশনে যোগদানের জন্য বাংলার মুসলিম লীগ দলের নেতৃত্ব দেন এ.কে ফজলুল হক এবং তাঁরা ২২ মার্চ লাহোরে পৌঁছেন। বাংলার প্রতিনিধি দলকে বিপুল জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করা হয়। জিন্নাহ তাঁর
দুঘণ্টারও অধিক সময়ব্যাপী বক্তৃতায় কংগ্রেস ও
জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের সমালোচনা করেন এবং দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি দাবি করার পেছনের যুক্তিসমূহ তুলে ধরেন। তাঁর যুক্তিসমূহ সাধারণ মুসলিম জনতার মন জয় করে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান লাহোর প্রস্তাবের প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করেন, যা আলোচনা ও সংশোধনের জন্য নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাবজেক্ট কমিটি সমীপে পেশ করা হয়। সাবজেক্ট কমিটি এ প্রস্তাবটিতে আমূল সংশোধন আনয়নের পর ২৩ মার্চ সাধারণ অধিবেশনে ফজলুল হক সেটি উত্থাপন করেন এবং চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ তা সমর্থন করেন। ২৩ মার্চ ১৯৪০ সালে পাকিস্থানের লাহোরে মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত এই প্রস্তাবটিই ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।

মূল বৈশিষ্ট্য

প্রথমত: নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দৃঢ়তার সাথে
পুন:ঘোষণা করছে যে, ১৯৩৫ খ্রীস্টাব্দের ভারত শাসন আইন -এ যে যুক্তরাষ্ট্রের (Federal) পরিকল্পনা রয়েছে, তা এ দেশের উদ্ভূত অবস্থার প্রেক্ষিতে অসঙ্গত ও অকার্যকর বিধায় তা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়ত: সমস্ত সাংবিধানিক পরিকল্পনা নতুনভাবে বিবেচনা না করা হলে মুসলিম ভারত অসন্তুষ্ট হবে
এবং মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি ব্যতিরেকে সংবিধান রচিত হলে কোন সংশোধিত পরিকল্পনা ও
তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

তৃতীয়ত: নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সুচিন্তিত অভিমত এরূপ যে, ভারতে কোন শাসনতান্ত্রিক
পরিকল্পনা কার্যকর হবে না যদি তা নিম্নবর্ণিত মূলনীতির উপর ভিত্তি করে রচিত না হয়: (ক)
ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সংলগ্ন বা সন্নিহিত স্থানসমূহকে 'অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে, (খ) প্রয়োজন অনুযায়ী সীমানা পরিবর্ত করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যেখানে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এলাকাগুলো 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ'(Independent States) গঠন করতে পারে, (গ) 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের' সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশসমূহ হবে স্বায়ত্বশাসিত ও সার্বভৌম।

চতুর্থত: এ সমস্ত অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের
ধর্মীয়,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক,প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য তাদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে সংবিধানের কার্যকর ও বাধ্যতামূলক বিধান রাখতে হবে। ভারতবর্ষের মুসলমান জনগণ যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে তাদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথেও আলোচনা সাপেক্ষে সংবিধানে কার্যকর বিধান রাখতে হবে।


তথ্যসূত্র
1. ↑ http://bangla.irib.ir/index.php?
option=com_content&task=view&id=9824
2. ↑ http://bn.banglapedia.org/index.php
বাংলাপিডিয়া , লাহোর প্রস্তাব
3. https://bn.m.wikipedia.org/wiki/লাহোর_প্রস্তাব

Friday, February 26, 2016

ছয় দফাগুলো কি কি?

ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে ২৩ মার্চ। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে । ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয় । 
১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ

প্রস্তাব - ১ :
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি:

দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক
রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব । সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারনের সরাসরি ভোটে।

প্রস্তাব - ২ :
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও
বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।

প্রস্তাব - ৩ :
মুদ্রা বা অর্থ-সমন্ধীয় ক্ষমতা:

মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু'টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহন করা চলতে পারেঃ-
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
অথবা
(খ)বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে
শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসু ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে
মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও
পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

প্রস্তাব - ৪ :
রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:

ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয়
সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয়
রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব - ৫ :
বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:

(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।
(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে
অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।
(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন বাধা-নিষেধ
থাকবে না।
(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বানিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে
বানিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব - ৬ :
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে
আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে। 


তথ্যসুত্র https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ছয়_দফা_আন্দোলন

Tuesday, February 23, 2016

স্বাধীন বাংলাদেশের অভুদয়ের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং উত্তর

.ইতিহাস শব্দের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে?
উত্তরঃ গ্রিক শব্দ
.আইন--আকবরি গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তরঃ আবুল ফজল ইবন মুবারক
. বাংলাদেশের নদ- নদীর সংখ্যা কত?
উঃ ২৩০ টি (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো"
বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং
প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে এর
ফলে তাদের হিসাব অনুযায়ি বাংলাদেশে নদীর
সংখ্যা এখন ৪০৫টি) আবার কোথাও কোথাও ৭০০ টি বলা হয়েছে
.দ্বীজাতি তত্বের প্রদতা কে?
উত্তরঃ কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর
. লাহর প্রস্তাব কত সালে উত্থাপিত হয কত সালে?
উত্তরঃ ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ
. ভারতের স্বাধীনতা আইন কত সালে পাশ হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে
. আওমী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী
. যুক্ত ফন্ডের দফা ছিল কয়টি?
 উত্তরঃ ২১ দফা
. কে কত সালে দফা প্রদান করেছিলেন?
উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে
১০. আসাদ গেটের পূর্রের নাম কি?
উত্তরঃ আইয়ুব গেট
১১. কত সালে কে শেখ মুজিবকেবঙ্গবন্ধুউপাধি দেন?
উত্তরঃ- তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকেবঙ্গবন্ধুউপাধি দেয়া হয়- ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
১২. মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কতটি সেক্টরে ভাগ করা হয়?
উত্তরঃ ১১ টি
১৩. কত সালে কোন পত্রিকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে "poet of politics" বলে উপাধি দেয়?
 উত্তরঃ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মার্কিন সাময়িকী 'নিউজ উইক' ম্যাগাজিনে
১৪. পাকিস্তানে সর্বপ্রথম সাময়িক আইন জারি করেন কে?
উত্তরঃ ইস্কান্দার মির্জা
১৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে  আওমেলীগ জাতীয় পরিষদে কত আসনে জয় লাভ করেন?
উত্তরঃ ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ
১৬. আখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের প্রয়াস কত সালে গ্রহণ করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে